হারিয়ে যাওয়া বাতাসা, নকুলদানা আর সন্ধ্যেগুলো ।
বহযুগ পরে ছাদে এতোটা সময় কাটাচ্ছি । অনেক কথা মনে পড়ে যাচ্ছে । ছেলেবেলায় রবিবারের নির্জন দুপুরে ছাদে উঠে ঘুড়ি ওড়ানো , কাল বৈশাখীর বিকেলে কালো মেঘের কোলে পাখিদের ঘরে ফেরা, দমকা ঝোড়ো বাতাস আর দূর থেকে ধেয়ে আসা বৃষ্টি । প্রথম বৃষ্টির মাটি ফুঁড়ে ওঠা গন্ধটা ভীষন ভালো লাগতো । ঝড়ের আগের মুহূর্তে শিরশিরে ঠান্ডা বাতাস আর বাড়ির সামনে শান্ত দীঘির জলে ছোট ছোট ঢেউ আর কালো আকাশের প্রতিচ্ছবি, পানকৌড়িদের জলের মাঝে লুকোচুরি খেলা । ছাদে উঠে বৃষ্টিতে ভেজা, আকাশ চিরে বিদ্যুতের ঝলকানি, সন্ধ্যাবেলায় লোডশেডিং হলেই ছাদে উঠে সপরিবারে আড্ডা দেওয়া, নারকেল কোরা আর চিনি দিয়ে মুড়ি মেখে খাওয়া দূরের আলো দেখতে দেখতে । হারিয়ে যাওয়া পুরোনো এ্যালবামগুলো যেন আবার ফিরে এসেছে ।
বহুদিন পর ছাদে উঠে দূরদূরান্ত থেকে ভেসে আসা শঙ্খধ্বনি শুনে ঠাকুমার কথা মনে পড়ে গেল । ঠাকুমা শাঁখ বাঁজাতেই ছুটে যেতাম ঠাকুরের আসনের সামনে । মাথা নিঁচু করে হাত জোর করে প্রণাম করার সময় নজর থাকতো নকুল দানার দিকে । ঠাকুরকে আরতি দিয়েই ঠাকুমা সযত্নে আমার ছোট্ট হাতজোড়ায় নকুলদানা আর বাতাসা তুলে দিত আর আমি পরম তৃপ্তিতে তা মুখে পুড়ে দিতাম ।
আজও ঠাকুরকে সন্ধ্যে দেওয়া হয় । বাঁজানো হয় শাঁখ । শুধু আমার ঠাকুমার সাথে নকুলদানা আর বাতাসাগুলো চিরতরে হারিয়ে গেছে । হয়তো আজও নকুলদানা দেওয়া হয় ঠাকুরকে । কিন্তু সেগুলো সযত্নে আমার হাতে তুলে দেওয়া মানুষটা বহুকাল হলো নেই । আজ আর তাই নকুলদানা আর বাতাসার খবর রাখি না । শুধু দূর থেকে ভেসে আসা শাঁখের আওয়াজ আর ধুঁপকাঠির গন্ধে ঠাকুমার মুখখানি মনে পড়ে যায় ।
Comments
Post a Comment